
আজকের আলোচনায় আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন সকলের শেখা উচিত? এবং এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আদনান আরিফ কিছুদিন আগে গুগলে সার্চ করেছিলেন “Top 5 Smart Watch”। তবে ইদানীং তিনি লক্ষ্য করছেন, তার ফেসবুক টাইমলাইনে বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনই হেডফোন সম্পর্কিত। মজার ব্যাপার হলো, এটি শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ নয়। ইনস্টাগ্রামে গেলেও একই রকম হেডফোনের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তার সামনে আসে। যদিও তিনি এখনো হেডফোন কেনেননি, তবে এই বিজ্ঞাপনগুলো তাকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং তাদের অফার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে।
তবুও আদনান আরিফ একটু চিন্তিত। তার মনে হচ্ছে, গুগলে সার্চ করার আগে তার টাইমলাইনে এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখা যেত না।
ঘটনা বিশ্লেষণ:
আদনান আরিফের এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের সাথেই ঘটে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, আপনিও একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। এর পেছনে মূল কারণ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটাররা নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে আদনান আরিফের মতো ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার প্রতি আকৃষ্ট করতে সফল হন। তাদের কৌশলগুলোর ফলেই বিজ্ঞাপনগুলো সঠিক সময়ে এবং সঠিক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে ইন্টারনেট, মোবাইল ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছে পণ্য বা সেবা তুলে ধরা হয়। মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে মানুষের কাছে পণ্য বা সেবার তথ্য পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ তাদের দৈনন্দিন সময়ের একটি বড় অংশ অনলাইনে ব্যয় করে, বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে এর পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
এই বিপুল সংখ্যক অনলাইন ব্যবহারকারীদের সামনে পণ্য বা সেবা উপস্থাপনের সহজ এবং কার্যকরী উপায়ই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। সহজ ভাষায় বললে, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রচার এবং বিক্রয় করা হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?
যেকোনো ব্যবসার প্রসার এবং সফলতার জন্য মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটিং পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান যুগে, মার্কেটিং হয়ে উঠেছে ডিজিটালাইজড। প্রতিষ্ঠান হোক বা পণ্য, মার্কেটিং ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অত্যন্ত নির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা কেবল সেই ব্যক্তিদের কাছেই প্রচার করা যায় যারা এটি খুঁজছেন বা এ বিষয়ে আগ্রহী। প্রচলিত পদ্ধতিতে এটি অর্জন করা প্রায় অসম্ভব।
পণ্য প্রচারের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রিন্ট এড, টেলিফোন যোগাযোগ, বা সরাসরি ফিজিক্যাল মার্কেটিংয়ের ব্যবহার করা হয়। তবে এভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, ডিজিটাল মার্কেটিং এসব সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে একটি কার্যকর ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করেছে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এই মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহকের আগ্রহ অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানো যায়, যা ফিজিক্যাল মার্কেটিংয়ে অনেক কঠিন এবং খরচসাপেক্ষ।
প্রচলিত মার্কেটিং পদ্ধতিতে দেখা যায়, একসঙ্গে অনেক মানুষের সামনে একটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয় বা প্রিন্ট এড বিতরণ করা হয়। এতে সমস্যাটি হলো, উপস্থিত সবার মধ্যে বিজ্ঞাপনের প্রতি সমান আগ্রহ থাকে না। প্রকৃত আগ্রহী গ্রাহকদের চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচারণার লক্ষ্য পূরণ হয় না।
কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এই সমস্যার সমাধান করেছে। এটি নিশ্চিত করে যে আপনার প্রতিটি বিজ্ঞাপন সঠিক এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছেই পৌঁছাবে। দক্ষ কোনো ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে কাজ করলে পণ্য বা সেবার প্রচার কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হয়। নির্দিষ্ট অডিয়েন্সের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুবিধাটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম বড় শক্তি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরণ
২ ভাগে ভাগ করা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং কে । অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অফলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং।
অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে বোঝায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে পরিচালিত সকল প্রকার মার্কেটিং কার্যক্রম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্যাটাগরি হল:
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
সার্চ ইঞ্জিনে কোনো ওয়েবসাইটকে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া। - সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)
পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্র্যাফিক আনা। - কন্টেন্ট মার্কেটিং
মানসম্মত ও প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচার। - সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)
ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালানো। - পে–পার–ক্লিক (PPC) এডভার্টাইজিং
বিজ্ঞাপনে প্রতি ক্লিকের ভিত্তিতে পেমেন্টের মাধ্যমে ট্র্যাফিক আনা। - অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অন্যান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিশনের ভিত্তিতে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা। - ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইলের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পণ্য বা সেবার প্রচারণা।
অফলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
অফলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে বোঝায় ইন্টারনেট ছাড়া অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মার্কেটিং কার্যক্রম। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান মাধ্যম হল:
- এনহান্সড অফলাইন মার্কেটিং
যেমন: LED টিভি স্ক্রিনে বিজ্ঞাপন প্রচার। - রেডিও মার্কেটিং
রেডিওতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষণ। - টেলিভিশন মার্কেটিং
টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বড় আকারে প্রচারণা চালানো। - ফোন মার্কেটিং
কল বা মেসেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ।
এ পর্যায়ে আমরা উপরে আলোচিত মার্কেটিং কৌশলগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা নেব। প্রথমেই আসুন জেনে নিই অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিস্তারিত।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
বর্তমানে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক আনতে পারে সার্চ ইঞ্জিন, আর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) হলো সেই খাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটিং কৌশল। সহজ কথায়, এসইও বলতে বোঝায় ওয়েবসাইটকে এমনভাবে সাজানো ও অপটিমাইজ করা, যাতে সার্চ ইঞ্জিন সহজেই বুঝতে পারে আপনার কন্টেন্টে কী ধরনের তথ্য রয়েছে। এটি সার্চ করা ব্যবহারকারীদের দেওয়া কীওয়ার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের র্যাঙ্কিংয়ে উপরে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) কে সংক্ষেপে সার্চ মার্কেটিং বলা হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা পেইড এবং অ-পেইড উভয় মাধ্যমের মাধ্যমে ট্র্যাফিক বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গুগলে যখন আমরা কিছু সার্চ করি, তখন দুটি ধরনের ফলাফল দেখা যায়। পেইড ফলাফলগুলোর পাশে “Ad” শব্দটি দেখা যায়, যা বিজ্ঞাপন হিসেবে চিহ্নিত থাকে। অন্যদিকে, অ-পেইড ফলাফলগুলি এসইও (SEO) এর আওতায় আসে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং শব্দটির সাথে অনেকেই ব্লগ পোস্টের সম্পর্কটি জুড়ে ফেলেন, কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি তেমন নয়। কন্টেন্ট মার্কেটিং মূলত গল্প বলার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবা প্রচার করা। স্টোরিটেলিং এর মাধ্যমে আমরা যে যেকোনো বিষয়কে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারি, এবং এটি কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আগামী পোস্টগুলোর মধ্যে আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। তবে তার আগে, এক্ষুণি আপনাদের মস্তিষ্ককে আরও একটু উদ্দীপ্ত করতে চাই, কারণ কন্টেন্ট মার্কেটিং প্রথম শুরু হয়েছিল ১৮৮৫ সালে, যখন ‘The Furrow’ নামক একটি ম্যাগাজিন এর মাধ্যমে এটি জনসাধারণের সামনে আসে।
সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অন্যতম জনপ্রিয় ক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে মানুষ অধিকাংশ সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটায়, তাই ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। সেলারদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি, অত্যন্ত উপযোগী প্ল্যাটফর্ম। কম খরচে নির্দিষ্ট লক্ষ্য শ্রেণীর কাছে পৌঁছানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটি সহজ ও কার্যকরী উপায়।
পে–পার ক্লিক এডভার্টাইজিং
মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হল পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন। বিশেষত যারা ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ বিকল্প। এই পদ্ধতিতে প্রতি ক্লিকের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া, এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালো ফল পেতে পারেন। তবে, এটি একটি ব্যয়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও বাজেটের প্রয়োজন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি মার্কেটিং পদ্ধতি, যেখানে ব্যক্তিরা অন্যদের পণ্য বা সেবা প্রচারের মাধ্যমে আয় অর্জন করেন। এই প্রক্রিয়ায়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের নিজেদের কোন পণ্য বা সেবা থাকে না। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্টের লিংক বা ব্যাকলিংক ব্যবহার করে ট্রাফিক তৈরি করেন, যা তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। এটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী উপাদান, যা বর্তমানে বেশ আলোচিত।
ইমেইল মার্কেটিং
ই-মেইল মার্কেটিং হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বা মার্কেটাররা ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের পণ্য বা সেবা প্রচার করে। যখন আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরি করি, তখন আমাদের ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করা হয়। এরপর তারা এই ই-মেইলগুলোর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারে। যদিও বাংলাদেশে ই-মেইল চেক করার অভ্যাস অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, তবে এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।
এটি আরও সহজভাবে বলতে গেলে, যেমন আমরা প্রতিদিন মেসেঞ্জার বা অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে মেসেজ চেক করি, তেমনি যদি ই-মেইল চেক করতাম, আর মার্কেটাররা তাদের পণ্য বা সেবা নিয়ে আমাদের ইনবক্সে মেসেজ পাঠাত, তাহলে তারা অনেক সহজে তাদের কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে পারত। অনেকেই মনে করেন, ই-মেইল মার্কেটিং একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি।
এখন, অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে কিছু ধারণা তো পাওয়া গেল, এবার আমরা অফলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়েও কিছু ধারণা দিতে চেষ্টা করবো।
Enhanced অফলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
সহজভাবে বললে, রাস্তার পাশে যে ধরনের এনিমেটেড বিজ্ঞাপনগুলি বিলবোর্ডে দেখা যায়, তা মূলত Enhanced অফলাইন মার্কেটিং।
এটি এক ধরনের প্রচারণা, যা অন্যান্য প্রচারণার তুলনায় বেশ ব্যয়বহুল।
যদি ট্রাফিক জ্যাম সমৃদ্ধ এলাকায় এই ধরনের বিজ্ঞাপন স্থাপন করা যায়, তবে এটি খুব সহজে একটি বিশাল অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম।
বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রেতারা এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারণা ব্যবহার করে থাকেন।
রেডিও মার্কেটিং
রেডিওর ইতিহাস অনেক পুরনো, প্রায় এক শতক হয়ে যাচ্ছে যখন প্রথমবারের মতো রেডিওতে সরাসরি লাইভ সম্প্রচার শুরু হয়েছিল।
তবে, আপনি হয়তো ভাবছেন কেন আমি রেডিও মার্কেটিংকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
আপনার মনে হতে পারে যে রেডিও একটি পুরনো এবং অপ্রাসঙ্গিক মাধ্যম, কিন্তু আমি আপনাকে কিছু তথ্য দিয়ে চমকাতে চাই।
আজও রেডিও প্রায় ৮৫% মার্কিনিদের কাছে পৌঁছায়, এবং তারা গড়ে ২ ঘণ্টা সময় রেডিও শোনার জন্য ব্যয় করে।
বিশ্বের রেডিও বিজ্ঞাপন খরচের ৪০% শুধু আমেরিকাতেই হয়। এছাড়াও, প্রায় অর্ধেক মার্কিন নাগরিক কমপক্ষে একদিন রেডিও শোনেন প্রতি মাসে।
তবে, রেডিওর জায়গাটি ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে পডকাস্ট। আমরা এই বিষয় নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
টেলিভিশন মার্কেটিং
টার্গেটেড অডিয়েন্স রিচের ক্ষেত্রে টেলিভিশন মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অন্যান্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
কারণ টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন সাধারণত সকল দর্শকের জন্যই প্রদর্শিত হয়, নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি বা আগ্রহভিত্তিক নয়।
তবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে মানুষের ব্রাউজিং প্যাটার্ন এবং আগ্রহ অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুবিধা থাকে, যা একে আরও কার্যকরী করে তুলেছে।
তবুও, টেলিভিশন মার্কেটিং এখনো বিপণন জগতে বিশাল একটি অংশ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ফোন মার্কেটিং
ফোন মার্কেটিং সহজে বোঝার জন্য একটি পরিচিত উদাহরণ হতে পারে মোবাইল অপারেটরদের প্রচারণা।
আমরা যারা বাংলাদেশে বাস করি, তারা প্রায়শই তাদের নানা রকম বিজ্ঞাপনী বার্তা বা অফারের কারণে বিরক্ত হই।
এই ধরনের বার্তা, যেমন নতুন প্যাকেজ, বিশেষ টিউন, প্রোডাক্ট প্রচার বা কনসার্টের তথ্য পাঠানোর মাধ্যমে যে প্রচারণা করা হয়, সেটিই মূলত ফোন মার্কেটিং।
এছাড়া, অনেক সময় কল করে চমকপ্রদ অফার বা প্রলোভন দেখিয়ে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানানো হয়।
এই প্রচারণাগুলোও ফোন মার্কেটিংয়ের অংশ। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন কম্পানি কুপন বা গিভওয়ে অফার দিয়ে তাদের পণ্য বা সেবার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ তৈরি করে।
আমাদের লক্ষ্য হলো ফোন মার্কেটিংয়ের এই দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এবং আপনাদের এমন কিছু তথ্য জানানো যা হয়তো আগে অজানা ছিল।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সম্ভাবনাময় এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এই খাতের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এখন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ডিগ্রি প্রদান করছে, এমনকি অনেকে মাস্টার্সের জন্যও এই বিষয়টি বেছে নিচ্ছেন।
কারণ, অদূর ভবিষ্যতে এই দক্ষতার চাহিদা আরও বহুগুণে বাড়বে।
তরুণ প্রজন্মের অনেকে ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন, কারণ এটি তুলনামূলক সহজে শেখা যায় এবং এতে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন দিক থাকার কারণে যে কেউ সহজে এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা শুরু করা থেকে শুরু করে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই অনলাইনে নিজেদের প্রচারণা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। এমনকি ছোট থেকে বড় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের পণ্য বা সেবার কথা মানুষকে জানাতে আগ্রহী।
বড় বড় কোম্পানি, যেমন মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড বা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো, তাদের পণ্য প্রচারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিগুলোর পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদম এখন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে পোস্টগুলো অর্থ ছাড়া খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
এই কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার খুঁজছে।
এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা থাকলে ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় কোম্পানির জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।
পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভালো উপার্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষ মার্কেটার হিসেবে আপনি পাড়ার দোকান থেকে শুরু করে বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন।
তাই যারা নতুন কিছু শিখতে এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং হতে পারে একটি আদর্শ পেশা।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং করে আয়
যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডিজিটাল মার্কেটারের গড় মাসিক আয় প্রায় ৪,৮৬২ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষের সমান।
অন্যদিকে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডিজিটাল মার্কেটারদের মাসিক বেতন গড়ে ১৫,০০০ থেকে ৮৮,০০০ রুপির মধ্যে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে পারেন কিংবা বড় কোনো মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েও ভালো আয় সম্ভব।সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে দেখা গেছে, প্রার্থীরা সরাসরি প্রচারের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচারণায় বেশি জোর দিয়েছেন এবং এর পেছনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ধারা অনুসরণ করে ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশ নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিতে পারে।
এর ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং পেশাজীবীদের জন্য নতুন ও বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।আশা করি, এই লেখাটি আপনাদের কাছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছে।পরবর্তী পোস্টে আমরা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আরো জানুন